চেনা করিডোর - ঈপ্সিতা মিত্র
চেনা করিডোর
ঈপ্সিতা মিত্র
<১>
শীতকালটা প্রিয়ালের আগে একটুও ভালো লাগত না.. জানলা,দরজা বন্ধ সন্ধ্যে থেকে , কেমন যেন চারিদিকটা নিঃস্তব্ধ , বাড়ির সামনের রাস্তাটা রাত ৮ টার পরই কি একা , কুয়াশার চাদরে ঢাকা... আর এত একাকিত্ব মোটেও পোষায় না প্রিয়ালের .. আর হবি তো হ জন্মদিনটাও এই শীতকালেই ... ডিসেম্বর এর ৩১ তারিখ... ডেট টা যেন কেমন একটা ! ...ইশ, যদি আর কয়েকটা ঘন্টা পরে এই পৃথিবীতে land করত, বছরের প্রথম দিনটায় .. বেশ একটা স্পেশাল ব্যাপার থাকত.. তা না, ৩১ তারিখ.. কোনো মানে হয় !......
আর সেই বছরের শেষ দিনটায় প্রিয়াল পা দিল ২০ তে.. teenage লাইফ এর মৃত্যু , আর নতুন এক জন্ম..মেয়ে থেকে মহিলা হবার জন্য এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া..আর ছোট থেকেই শুনে আসছে সবার মুখে, ''মেয়েরা তো কুড়ি তেই বুড়ি ..''.. তাই সেই বারের জন্মমদিনটা একটু হলেও depressing প্রিয়ালের কাছে...
<২>
এই সবই ভাবছিল কলেজ এ ক্লাস এ বসে বসে.. 2nd জানুয়ারী , ক্রিসমাসের বড় একটা ছুটি কাটিয়ে আজ কলেজের ঘুম ভাঙ্গলো..আর সঙ্গে ওর ও.. এতদিন বেশ ১০ টা অব্দি ঘুম দিচ্ছিল.. নিশ্চিন্তে , কিন্তু আজ এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় সকাল ৮ টায় ঘুম থেকে উঠে কলেজের জন্য রেডি হয়ে আসতে যা ত়া অবস্থা !... আর আজ আবার প্রথম ক্লাস .. কোন এক নতুন স্যার এর..... পি.কে.সি ম্যাডাম অন্য কলেজে চলে যাওয়ায় তিন মাস ওনার সব ক্লাস বন্ধই ছিল , কি ভালো... কিন্তু না.. প্রিন্সিপাল ম্যাম এর সয্য হলো না.. কোন একটা নতুন পাবলিক কে যোগার করে এনেছে.. তাই তো এই সাততাতারী প্রথম ক্লাস করতে আসা..নইলে বেশ ১২টায় হেলে দুলে কলেজ আসতো... এই সময়ই আনমনে ক্লাস এর দরজার দিকে চোখটা চলে গেল..প্রিন্সিপাল ম্যাম এর সাথে এটা কে ঢুকলো দরজা দিয়ে ? এ স্যার না মডেল ? হাইট 5 ফুট '9 তো হবেই, গায়ের রং উজ্বল শ্যাম বর্ণ , চোখে ব্ল্যাক ফ্রেম এর চশমা,মুখটার মধ্যে বেশ একটা মিষ্টি মিষ্টি ব্যাপার , white শার্ট এর ওপর black সোয়েটার, আর তার সাথে blue জিন্স .. পুরো যেন সিনেমার হিরো..এ নেবে আজকের প্রথম ক্লাস... এর জন্য সকাল ৮টার সময় কেন, ভোর চারটে থেকে ধুপ ধুনো নিয়ে কলেজ চলে আসতে পারবে ও.. প্রিন্সিপাল ম্যাম নামটা যেন কি বললো? অগ্নিভো চ্যাটার্জি ... সত্যি,একদম ঠিক নাম.. স্যার এর মধ্যে বেশ একটা ফায়ার আছে .. ভেবেই একটা হাসি চলে এলো প্রিয়ালের ...
<৩>
এরপর আর একটা দিনও কলেজ মিস না..এই শীতে ঘুম থেকে ওঠার জন্য আগে চারটে এলার্ম দিতে হত..কিন্তু এখন নো এলার্ম , স্যার এর ওই মিষ্টি মুখটাই ওর কাছে এলার্ম এর কাজ করে..যখন তখন চোখ বন্ধ করে দেখতে পায় , ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সপ্নেও অগ্নিভো স্যার ওকে লেকচার দেয় .. এখন ইংলিশ এর সেক্সপিয়ার ওর কত নিজের.. আগে তো বই টা খুললেই কেমন যেন মাথা ধরে আসতো..কি বোরিং লাগত নোটস গুলো..কিন্তু এখন ওই নোটস,ওই বই, ওই সেক্সপিয়ার ,সবাই ওর কত কাছের.. ওই সব কিছুর মধ্যেই তো ও অগ্নিভো স্যার কে খুঁজে পায়... কি করে ?
যখনি অগ্নিভো স্যার পড়া বোঝাতে বোঝাতে দু একটা question করে বসে, তখনি প্রথম হাতটা তো ওরই ওঠে, প্রিয়াল আর কাউকে chance ই দেয় না..একেবারে যেচে পরেই উত্তর টা দিয়ে দেয়.. তারপর ক্লাস টেস্টস এ যখন অগ্নিভো স্যার সবার সামনে এসে বলে, "এবার highest marks পেয়েছে প্রিয়াল.." ওর মনে হয় ও যেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড টা হাতে পেয়েছে.. আর এই ভালো স্টুডেন্ট এর তকমা নিয়েই তো অগ্নিভো স্যার এর কাছে নিজের একটা impression তৈরি করেছে.. যেই impression এর ওপর ভর করেই চলে ওর গোপন প্রেমের বহিঃপ্রকাশ , কখনো আলাদা করে নোটস চাইতে যাওয়া,আবার কখনো ক্লাস এস হলে টিচার্স রুমে গিয়ে নতুন কোনো প্রশ্নের উত্তর বুঝে নেয়া .. ওই নোটস গুলো যেন প্রিয়ালের কাছে love letters ..ওগুলোকে নিয়েই সারা দিন,সারা রাত কি ভাবে কেটে যায় ও বুঝতেই পারে না !..
এই শীতকালটা এখন কি সুন্দরই না লাগে ওর !..সব সময় যেন কানের কাছে কেউ ভাওলিন বাজায়, প্রেমে পড়লে হয়ত একটা music সব সময় চারিদিকে বাজে !..যখন সকালে ঘুম থেকে ওঠে ,জানলা খুলে চারিদিকটা কুয়াশায় আবছা দেখে তখন মনে হয় এই কুয়াশার ওপারেই তো আছে অগ্নিভো স্যার..বেলা বাড়লে কুয়াশা কাটলেই দেখতে পাবে.. যখন পাশের বাড়ির বাগানে গাছের পাতা গুলো ঝরে পড়তে দেখে তখন মনে হয় ওই ঝরা পাতার শব্দেও যেন একটা music আছে, যেটা শুধু ও শুনতে পায়..এখন আর বেশি ভির ভালো লাগে না ওর !..একাকিত্ব খুব নিজের..তখনি নিজের সাথে সময় কাটানো যায়..তখনি চোখ বন্ধ করে ওই মিষ্টি মুখের ছেলেটার সাথে কত মনে মনে কত কথা বলা যায়...
এখন প্রিয়াল নিজের বয়স নিয়ে বেশ খুশি.. ২০ বছর হয়ে গেছে মানে lady , কতদিন আর বাচ্চা থাকবে.. আর খোঁজ নিয়ে দেখেছে অগ্নিভো স্যার এর বয়স এখন ২৫.. পাঁচ বছরের গ্যাপ চলেই.. নর্মাল.. আরোও খোঁজ নিয়েছে মিস্টার অগ্নিভোর ব্যাপারে.. সে দুর্গাপুরেরই বাসিন্দা, বাবা মার একমাত্র সন্তান , নিজের ব্যাচ এর টপার ছিল না কি.. আর রোজ জিম করে.. না এই ইনফরমেশন টা কেউ দেয়নি .. সেটা ও নিজেই বুঝে নিয়েছে.. নইলে এই রকম সিনেমার হিরোর মতন চেহারা থরীই না হয় !..
ওর মতন ওর ক্লাস এর অনেক মেয়েরই এই কলেজ এ আসা নতুন হিরোর প্রতি বিশাল attraction .. চার পাঁচ জন তো আবার কোথা থেকে ফোন নম্বর ও যোগার করে নিয়েছে..মাঝে মাঝে 'good morning ', 'good night ' মেসেজ পাঠায়, আর ক্লাস এ এসে ফলাও করে সবাইকে শোনায়.. যত সব..শুনলেই গা টা জ্বলে ওঠে ওর..সব তো এক একটা মেক আপ কুইন ,কলেজে আসে না বিয়ে বাড়িতে বোঝা দ্বায়, আর তার মধ্যে ওর হিরো কে ফোন এ মেসেজ !.. আর কাউকে পেল না !.. তবে প্রিয়াল নিজের একটা বন্ধুর কাছ থেকে নম্বরটা পেয়েছিল...তবে সেই নম্বর এ ফোন বা মেসেজ কিছুই করেনি.. আসলে ওর একটা ব্যাপার আছে.. ওর যা কিছু হয় মনে মনে.. বাইরে দেখাতে কেমন একটা লজ্জা লাগে .. আর হাজার হলেও স্যার তো, সে যতই পাঁচ বছরের বড় হোক.. নিজের লিমিট টা কে ও বোঝে... লিমিটলেস হতে ও কখনই পারে না.. ভয় হয়, যদি যেচে পরে মেসেজ করলো আর reply এলো না !... যদি ফেসবুক এ রিকোয়েস্ট পাঠালো আর accept করলো না !.. যদি পড়াশোনার বাইরে বাড়তি কথা বললো আর পাত্তা দিল না !.. তখন ? তখন তো ওরই খারাপ লাগবে..অপমানিত হয়েছে মনে হবে..তার থেকে এটাই ভালো.. ওই নোটস, ওই প্রশ্ন উত্তরের খেলা, আর মনে মনে কথা... এইসবে কোনো risk নেই, কোনো ভয় নেই.. পুরোটাই নিজের..
<৪>
তবে একদিন একটা উল্টো ব্যাপার হয়েছিল.. অগ্নিভো স্যার ক্লাস এর সবার সামনে ওকে ডেকে নিজের নম্বর দিয়েছিল..বলেছিল পড়াশোনার ব্যাপারে কোনো রকম দরকার লাগলে যেন ওকে কল বা মেসেজ করে.. সেই দিন ক্লাস এর মেক আপ কুইনসরা যেন ওর দিকে কেমন লাল লাল চোখে তাকিয়েছিল..
ওই বার কলেজ এর এস্কার্সন এর কথাটাও খুব মনে পরে প্রিয়ালের.. সিকিম যাওয়া হয়েছিল সেবার.. পাহাড় আর কুয়াশায় ঘেরা দেশ.. আগে যদিও পাহাড় কে দেখে ওর খুব একা লাগত, খুব নিঃস্তব্ধ লাগত, কিন্তু এইবার পাহাড় কে কেমন যেন নিজের মতন লাগলো.. একা একা দাঁড়িয়ে মনে মনে কত কি ভেবে চলেছে যেন এই পাহাড়গুলো... ! ওর মতন..
সেইদিন ওর খুব ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল... হোটেল এর ঘরে ওর রুমমেটসরা তখনও ঘুমের দেশে.. হঠাত কি মনে হলো, ও ব্যালকনির দরজাটা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালো... পুরো আকাশটা লাল হলুদ রঙে মোরা .... তার মধ্যে দিয়ে মেঘ ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছে... আর পাহাড় এর মাঝখান থেকে ছোট্ট একফালি সূর্য উঁকি দিচ্ছে... অবাক চোখে চেয়েছিল সেই আকাশটার দিকে!.. তখনি পাশ থেকে সেই চেনা গলার আওয়াজ ,
"তুমি ? এত সকালে উঠে পর ?"....অগ্নিভো স্যার, পাশের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে.. ও তো জানতই না যে ওদের পাশের রুমটাতেই কলেজের হিরো আছে .... তাই একটু সার্প্রাইসড না হয়ে পারল না !.. তারপর কিছু কথা সাজিয়ে বলল, " না , মানে রোজ উঠি না.. আজ হঠাত ঘুমটা ভেঙ্গে গেল..আপনি?".....
সে হেসেই উত্তর দিল, " আমারও তাই, হঠাত ঘুমটা ভেঙ্গে গেল... ব্যালকনিতে এসে যে এই রকম একটা সারপ্রাইস পাব ভাবিনি!.. আই মিন সান রাইস টা যে দেখতে পাবো সত্যিই ভাবিনি ... "
কথাটা শুনে প্রিয়াল এর ঠোটে একটা হাসি চলে এলো.., সত্যিই তো, আজকের ভোরটা একটা সারপ্রাইস .... !.. সে আবার প্রশ্ন করলো, "তুমি হাসছ যে ? তোমার পাহাড় ভালো লাগে ?".............. প্রিয়াল একটু ভেবে বলল, "আগে লাগত না.. কিন্তু এখন খুব ভালো লাগে..নিজের লাগে..".........ওদের কথার মধ্যেই সেইদিন পাহাড় ভেদ করে কখন সূর্যটা উঠে গিয়েছিল ওরা ঠিক খেয়াল করেনি!... কুয়াশার চাদরে ঢাকা পাহাড়ের সেই ভোরটার কথা প্রিয়াল ডায়রির পাতায় শব্দ দিয়ে সাজিয়ে রেখেছিল..
সেই ট্রিপ এর আর একটা ঘটনাও ওর ডায়রির পাতায় লেখা... সন্ধ্যেবেলা যখন ক্যাম্প ফায়ার হচ্ছিল তখন অগ্নিভো স্যার গিটার বাজিয়ে গান গেয়ে সবাইকে অবাক করে দিল !.. বাবা, এই ছেলের তো গুনের শেষ নেই !.. কলেজের প্রত্যেকের মুখে এখন শুধু একটাই কথা... প্রিয়ালও তাই ভাবছিল !.. সেইদিন অবশ্য প্রিয়ালও একটা গান গেয়েছিল, "তুমি বৃষ্টি হয়ে এলে, আজ শিউলি ফোটার দিনে.."......... ওর খুব পছন্দের একটা গান... সেইদিন গানটা শেষ হতেই অগ্নিভো স্যার সবার সামনেই প্রিয়ালকে বলল, "বাহ, তোমার গানের গলা তো খুব সুন্দর... খুব ভালো গেয়েছ..".......... প্রিয়ালের মনে হয়েছিল এই কথাগুলো যদি মোবাইল এ রেকর্ড করে রাখতে পারত !.. আর বার বার ইচ্ছে হলেই রেকর্ডটা প্লে করে শুনতে পারত ! তাহলে তার থেকে ভালো আর কিছুই হত না. !....
আর একটা দিনও ওর বেশ মনে পরে..কলেজের ফাউন্ডেশন ডে.. প্রিয়াল গান গাইবে আবার নাটক ও করবে..আর ওই স্পেশাল দিনটায় শাড়ি না পড়লে তো চলেই না..মা এর লাল রঙের একটা কাঞ্জিভরম , আর তার সাথে দিদির কাছ থেকে ধার করা কানের দুল.নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল যেন..
কলেজে সেই দিন খুব ব্যস্ততা.. নাটকের স্ক্রিপ্টটা হাতে নিয়ে প্রিয়াল বেশ জোরে জোরে পা চালিয়ে দোতলায় করিডোর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল..হটাথ সামনে অগ্নিভো স্যার, কিন্তু ওকে দেখেই যেন থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল.. ব্ল্যাক ফ্রেম এর ওপারের দুটো চোখে একটা মুগ্ধ দৃষ্টি.. কিছুতেই যেন অগ্নিভো স্যার এর পা এগোচ্ছে না !..করিডোর তো ফাঁকা .. সবাই ফাংসন এর জন্য নিচের অডিটোরিয়াম এ..এখানে ওই দুজন ছাড়া আর কেউ তো নেই..তার মানে প্রিয়ালকেই দেখছে..প্রিয়ালও দু মিনিটের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল..মনে মনে তো কত কথা বলেছে এর সাথে.. একবার যদি সামনাসামনি বলতে পারত !... যদি ছাত্রী না হয়ে অন্য কিছু হত? যদি ওরা একই কলেজে পড়ত... বা একই ইউনিভার্সিটি তে , বা একই জায়গায় চাকরি করত ............... হয়ত এই না দেখা দুরত্বটা থাকত না তাহলে !.. এই সব ভাবনার মধ্যে ফাঁকা ক্লাস রুমস, আর করিডোরের নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে কখন যে এই কলেজের হিরো ওর আরোও সামনে এগিয়ে এসেছে ও বুঝতেই পারেনি... হটাথ একটা প্রশ্নে সম্ভিত ফিরল...
"তুমি ফাংসন করছ?? টিচার্স রুম এ শুনলাম.. কি নাম তোমাদের নাটকের ?? "
<৫>
সময় খুব তারাতারি নিজের পা চালায়..কখন যে ওর কলেজের শীতকালগুলো কেটে গিয়েছে.......... তারপর গ্রীষ্ম ,বর্ষা , শরত পেরিয়ে তিন বছর কেটে গেছে..মাস্টার্স কমপ্লিট..এক বছর ধরে চাকরির খোঁজ .. তারপর হটাথ পেপার এর পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে চোখে পড়ল একটা চাকরির এড .. ওপরে লেখা ওই চেনা কলেজের নাম.. পার্টটাইমার চাই.. ইংলিশ এর জন্য......... চোখটা কেমন যেন বন্ধ হয়ে এলো !... কি অদ্ভুত... তিন বছর বাদেও কলেজের ওই হিরো টার মুখ টা এখনো স্পষ্ট ভাসছে ওর সামনে. !..
ওই না বলা প্রেমের ফলাফল আর কিছু হোক না হোক, সেটা প্রিয়াল কে একটা ফার্স্টক্লাস আনিয়ে দিয়েছিল খুব সহজেই !..নোটস, সেক্সপিয়ার এর সাথে সারা দিন ,সারা রাত সময় কাটানোটা বিফলে যায়নি..তার ওপরে কলেজের ex student ..প্রিন্সিপাল এর চেনা মুখ..একটা ইন্টারভিউ তেই চাকরিটা ওর..
আজ 2nd জানুয়ারী ..ক্রিসমাসের ছুটির পর কলেজের শুরু আজ থেকেই..হলুদ রঙের তাতের শাড়ী, হাতে জন্মদিনে পাওয়া গোল্ডেন কালার এর ঘড়ি..আর একটা গোলাপী রঙের শাল জড়ানো.....না, আজ আর কিছু ধার করে পরেনি..সব নিজের..
ওই দোতলার করিডোর ,চেনা ক্লাসরুম গুলো ,আর অচেনা নতুন মুখের ছেলে মেয়ে গুলোকে পেরিয়ে যখন টিচার্স রুম এ ঢুকলো, সামনের টেবিল এ সেই কলেজের হিরো....চশমাটা বদলেছে..ব্ল্যাক ফ্রেম টা রিমলেস হয়ে গেছে..বাকি সব একই আছে..এখনো মনে হয় রোজ জিম করে !.. অবাক চোখে সেই হিরো ওর দিকে তাকিয়ে এখন !..তারপর নিজে থেকেই কাছে এসে প্রশ্ন করলো,
"প্রিয়াল, তুমি? এখানে ? তুমিই সেই নতুন লেকচারার তার মানে ?"
বাবা, নামটা মনে আছে.. মনে মনে এটা ভেবে বেশ খুশি হলো প্রিয়াল.....তিন বছর তার মানে এমন কিছু সময় নয় !.. আরো ও নিজেও তো ভোলেনি..সেই মুখ,সেই হাসি,সেই নোটস !... কিন্তু হটাথ একটা প্রশ্ন মাথায় চলে এলো....আর প্রিয়াল আঁতকে উঠলো....না....আজ আর মনে মনে কথা না..এখন তো ও ছাত্রী না..কলিগ ,এখন তো জীগেস করার হক আছে.. " শুনুন, একটু বাইরে করিডরে আসুন তো.. কথা আছে..".... লাইন টা বলেই প্রিয়াল টিচার্স রুম থেকে বেরিয়ে গেল...
করিডোরের রেলিং টা ধরে দাঁড়িয়ে প্রিয়াল সোজাসুজিই প্রশ্ন টা করলো,
"আপনি বিয়ে করেছেন ?"
" হ্যা ! মানে না তো !... "
"good , প্রেম টেম করেন না কি ? স্পেশাল কেউ আছে ?"
"হটাথ এই প্রশ্ন ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না............ "
"উফ, অত বুঝতে হবে না...... কেউ কি আছে ? এক কথায় উত্তর... প্লিস .."
"না, নেই !..প্রেম একবারই করেছিলাম.. অনেকদিন আগে..যখন কলেজে পরতাম... "
"যাক, ভালো.. anyway nice to meet you again অগ্নিভো .. "
না, আজ আর স্যার বলবে না.. আজ তো আর ওই না দেখা দুরত্বটা নেই !.. তিনটে বছর পেরিয়ে এই শীতকালে আজ ওরা একদম এক...........